Sunday 31 January 2010

টিটো রাজস্বী মুখোপাধ্যায় : এক অটিস্টিক কবি দার্শনিকের পৃথিবী

দক্ষিণ ভারতে জন্ম নেয়া টিটো রাজর্স্বী মুখোপাধ্যায় আজ যুবক। তিন বছর বয়সে সেই আমলের বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন ও মেন্টালি রিটার্ডেড (বুদ্ধি প্রতিবন্ধী)। বলেছিল, গুরুতর অটিজম (সিভিয়ার অটিজম) আছে ওঁর। মুখে কথা বলার স্বভাব নেই টিটোর। ওর মা সোমা মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টা আর অধ্যাবসায় টিটো-কে পড়তে লিখতে শিখিয়েছে। লিখে লিখে চিন্তা আর প্রজ্ঞা প্রকাশ করতে শিখিয়েছে। অটিজম স্পিকস (আগে এর নাম ছিল কিউর অটিজম নাউ বা ক্যান)নামের একটি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় ওরা পাড়ি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্দেশ্য নাম-করা সব স্নায়ু বিজ্ঞানী আর বিশেষজ্ঞ টিটো-কে নিয়ে গবেষণা করবেন। ক্যান জানবে মা সোমার অভিজ্ঞতা। টিটো আজ অসাধারণ মেধাবি দার্শনিক আর কবি বলে সুপরিচিত। বর্তমানে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ। এরই মধ্যে ওঁর বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বেয়ন্ড দা সাইলেন্স : মাই লাইফ এন্ড দা ওয়ার্ল্ড এন্ড অটিজম, দি মাইন্ড ট্রি, দি গোল্ড অব দা সানবিমস, সামপ্রতিক প্রকাশনা হাউ ক্যান আই টক ইফ মাই লিপস্‌ ডোন্ট মুভ : ইনসাইড মাই অটিষ্টিক মাইন্ড। টিটোর কবিতায় প্রকাশ পায় ওঁর মনের কথা, চিন্তার কথা, অনুভূতির কথা। জানা যায় ওর পৃথিবীর রং রূপ গন্ধের কথা। টিটো-র স্বানন্দ সম্মতি নিয়ে দুটি কবিতার বাংলা রূপ নীচে পরিবেশিত হল :
কবিতা এক
নর-নারীর কৌতুহলী চোখ আমায় পরখ করে
ডাক্তারের দুর্বোদ্ধ শব্দকোষ বয়ান করে শরীর আমার
আমি চেয়ে থাকি অবাক বিস্ময়ে
আমার চিন্তা আমার বলা-না-বলার চেয়ে দীর্ঘতর
আমার প্রতিটি সঞ্চরণ ভেসে আসা সব আর্তনাদ
ঘটনা পরম্পরার বন্দীশালা থেকে
কারণের ঘাত হয়ে যায় আরেক ঘাতের কারণ
আমি কেবল চেয়ে থাকি অবাক বিস্ময়ে
মনে ভাবি একদিন বদলে দেব এই চারিধার
কল্পনার সব রঙ যে সঙ্গী আমার
মুক্ত আমি যাই চলে যাই মনের দেশে
কী দারুন যে স্বপ্ন আমার সেই আবেশে
জগৎ যেন নিরাশ ভরা নৌকো হায়
চলছি ছুটে এই চলা মোর নাও যদি হয়।

কবিতা চার
ভাবি একরাশ ঝলমলে নীলের কথা
হায় মন ভরে গেল যেন নিকষ কালো ব্যথা
হতাশা এল মনের গহীন কোণে
রঙের এই দুরন্তপণা বারম্বার খেলায় মাতে আমার সাথে
অসহায় আমি হন্যে হয়ে ফিরি
তাইতো এমন সহসা উঠে দাঁড়াই আর পাকে পাকে ঘুরে ফিরি
শরীরের এই ঘুরপাক
চিন্তাগুলোকে এক সারে দাঁড় করিয়ে দেয় যেনবা
কালো চিন্তার ঘোর যায় কেটে
বুঝতে পারি যত জোরে ঘুরি আমি
কালোরা সরে যায় তত দূরে
আঁধারের একটি বিন্দুও যখন আর নেই বলে মনে হয়
দূর হয়ে যায় সকল নিকষ কালো
সহসা উল্টো ডানায় ভর করে ঘুরতে থাকি
নীলের অন্বেষণে ফিরি
কত নীল চাই তোমার দিতে পারি আমি সব
যত নীল চাই ঘুরব তত বেগে
না হলে কীসের এত তাড়া
যেন ঘুরন্ত বৈদ্যুতিন পাখা হয়ে যাই
যখন থেমে যাই রাজ্যের দঙ্গল ভীড় করে আবার
ধুলায় লুটায় ছিন্নভিন্ন শরীর আমার
কী করে হায় জুড়ব বলো ওদের আবার